কতটা বৈচিত্র্যময় হবে বাইডেনের মন্ত্রীসভা!

 প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:০০ পূর্বাহ্ন   |   আন্তর্জাতিক

কতটা বৈচিত্র্যময় হবে বাইডেনের মন্ত্রীসভা!


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জো বাইডেনকে কৃষ্ণাঙ্গসহ অভিবাসীরা কতটা ভালোবাসেন তা ভালো করেই জানেন তিনি। বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গদের কাছে তিনি ঋণীও বটে! ঋণের প্রতিদান হিসেবে জো বাইডেন বৈচিত্র্যময় মন্ত্রীসভা গঠনের অঙ্গীকার করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি অনেকটাই তার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের পথে।



 

মন্ত্রীসভায় নারী থেকে শুরু করে কৃষ্ণাঙ্গ, ল্যাটিনো ও অভিবাসীরা স্থান পেয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত এশিয়ান-আমেরিকান কিংবা মুসলিমকে কোনো পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আবার উদারপন্থী আমেরিকানরা মন্ত্রীসভা নিয়ে তাদের হতাশা প্রকাশ করেছেন। দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন দুই শতাব্দী আগে বৈচিত্র্যময় কিংবা বহুত্ববাদী এই ধরনের শব্দ উল্লেখ করেননি। তবে তিনি এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলেছিলেন। ১৭৯১ সালে সব মন্ত্রীই শ্বেতাঙ্গ ও পুরুষ ছিল।



হোয়াইট হাউজের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণী পরিষদের পরিচালক হিসেবে বাইডেন বেছে নিয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ নারী সুসান রাইসকে, যিনি বারাক ওবামার সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। এর আগে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত আর্মি জেনারেল লয়েড অস্টিনের নাম ঘোষণা করেন বাইডেন। অস্টিনই হতে যাচ্ছেন প্রথম মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এছাড়া আরো কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গ জায়গা পেতে যাচ্ছেন বাইডেনের প্রশাসনে। এর মধ্যে ট্রেজারি বিভাগের দায়িত্ব পাচ্ছেন কৃষ্ণাঙ্গ নারী জানেট ইয়েলেন।



প্রথম হিস্পানিক হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পাবেন জাভিয়ের বেকেরা। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন কিউবান বংশোদ্ভূত আইনজীবী, প্রথম ল্যাটিনো এবং প্রথম অভিবাসী আলেজান্দ্রো মায়োর্কাস। এছাড়া প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পাচ্ছেন সেসিলিয়া রোসে। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবেও কৃষ্ণাঙ্গ থমাস গ্রিনফিল্ডকে বেছে নিয়েছেন বাইডেন। জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদে নারী অ্যাভ্রিল হেইনসকে মনোনয়ন দিয়েছেন বাইডেন। সর্বশেষ শুক্রবার জানা যায়, ২০২১ সালে আমেরিকা প্রথম আদিবাসী এক নারীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেখতে পাচ্ছে।



১৯৩৩ সাল থেকে মাত্র ১১ জন প্রেসিডেন্ট মন্ত্রীপরিষদে নারীদের নাম দিয়েছেন। কোনো ক্যাবিনেট দেশের লিঙ্গ বা জাতিগত ভারসাম্যের সঙ্গে মেলেনি। যদিও প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে মন্ত্রীপরিষদের আকার। অন্তত ১৫ জন নির্বাহী থাকে, যা গত ৩০ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের আমল পর্যন্ত মন্ত্রীসভায় ছিল। ১৯৯৩ সালে বিল ক্লিনটন প্রশাসনের ব্যাপারে উদ্বোধনের দিন ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছিল, ডেমোক্র্যাট নেতা বিল ক্লিনটন ইতিহাসের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় মন্ত্রীসভা গঠন করেছেন। তার মন্ত্রীপরিষদে পাঁচ জন নারী, চার কৃষ্ণাঙ্গ এবং দুজন ল্যাটিনো ছিলেন। ২০০১ সালের বুশ মন্ত্রীসভায় জামাইকান অভিবাসীর ছেলে কলিন পাওয়েলকে দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বুশ তার পরিবহন বিভাগের প্রধান করেছিলেন ক্লিনটনের অধীনে মন্ত্রীপরিষদে থাকা প্রথম এশিয়ান-আমেরিকান ডেমোক্র্যাট নরম্যান মিনেটাকে।


বুশ পরবর্তীকালে তার দ্বিতীয় মেয়াদে আফ্রিকান-আমেরিকান কনডোলিজা রাইসকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে আবার ইতিহাস রচনা করেছিলেন। রাইস পরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও হয়েছিলেন। বুশ প্রথম প্যাসিফিক আইল্যান্ডার এবং এশিয়ান-আমেরিকান মহিলা এলেন চাওকে শ্রমমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রীসভায় রেখেছিলেন। ২০০৯ সালের ওবামার মন্ত্রীসভাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ-সংখ্যালঘুর বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ওবামার অভ্যন্তরীণ বৃত্তে সাত জন মহিলা, নয় জন সংখ্যালঘু এবং মাত্র আট জন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ছিলেন। ওবামার অধীনে সুসান রাইস প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী, যিনি জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং এরিক হোল্ডার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল হয়েছিলেন।


২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রশাসন মূলত রোনাল্ড রিগ্যানের আমলে ফিরে গিয়েছিল। ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ বৃত্তে উল্লেখযোগ্য ভাবে শ্বেতাঙ্গ, ধনী এবং পুরুষরা স্থান পায়। যদিও তার হোয়াইট হাউজে আগের রিপাবলিকানদের চেয়ে বেশি নারী ছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রথম ভারতীয়-আমেরিকান নিক্কি হ্যালিকে নিয়োগ দেন।



সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভূমিকায় কেন নারী এবং সংখ্যালঘুদের আসতে এত দীর্ঘ সময় লেগেছে তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন রুটগার্স ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর আমেরিকান উইমেন অ্যান্ড পলিটিক্সের অধ্যাপক কেলি ডিট্টমার। তিনি জানান, মার্কিন কংগ্রেসে প্রথম নারী নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯১৬ সালে। এর দুই দশক পর প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট প্রথম নারী হিসেবে ফ্রান্সিস পার্কিনসকে শ্রমমন্ত্রী করেছিলেন।


কেলি ডিট্টমার জানান, কালো এবং অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘু আমেরিকানদের গল্পটি তৈরি হতে আরো বেশি সময় নিয়েছে। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি ১৮৭০ সালে কংগ্রেসে আসন গ্রহণ করেছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন ১৯৬৬ সালে রবার্ট ওয়েভারকে নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত আমরা মন্ত্রীসভায় কোনো কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে দেখতে পাইনি। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা কংগ্রেসে নির্বাচিত হতে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত সময় লেগেছিল। মন্ত্রীসভায় প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী প্যাট্রিসিয়া রবার্টস হ্যারিস ১৯৭৭ সালে আবাসনমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।


বাইডেনের মন্ত্রীসভায় বিভিন্ন জাত আর বর্ণের মানুষ প্রাধান্য পেলেও উদারপন্থীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, মন্ত্রীসভায় উদারপন্থীদের স্থান হচ্ছে না। যদিও উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত ডেভ হল্যান্ডকে বাইডেন মনোনয়ন দিলে সেই হতাশা দূর হতে পারে। উদারপন্থীরা মনে করছেন, মন্ত্রীসভায় উদারপন্থীদের প্রাধান্য থাকা উচিত। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এবং কংগ্রেসম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও করটেজ আরো উদারপন্থীদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। স্যান্ডার্স গত সপ্তাহে এক সাক্ষাতকারে বলেন, উদারপন্থীদের সমর্থন ছাড়া বাইডেন হোয়াইট হাউজ জয় করতে পারবেন না।


আন্তর্জাতিক এর আরও খবর: