নারী ইস্যুতে ঐকমত্য কমিশন ঘেরাও ছাড়া উপায় নেই: রাশেদা কে চৌধুরী

 প্রকাশ: ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০২:০৯ অপরাহ্ন   |   জাতীয়

নারী ইস্যুতে ঐকমত্য কমিশন ঘেরাও ছাড়া উপায় নেই: রাশেদা কে চৌধুরী


সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী বলেছেন, 'ভোট গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার। নারীর অধিকার প্রশ্নে ভোট বর্জন কোনো সমাধান নয়। নারীর প্রতিনিধিত্ব ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন, নারীর জন্য অবমাননাকর। কমিশন ক্ষমতার বিলি বণ্টন ও রাজনৈতিক ইস্যুতে ব্যস্ত।সেখানে নারী ইস্যু অবহেলিত। “নারীকে বাদ দিয়ে নারীর ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নয়” এই নীতি আন্তর্জাতিক ভাবে অনুসৃত। এমতাবস্থায় মনে হচ্ছে ঐকমত্য কমিশন ঘেরাও ছাড়া কোনো উপায় নেই।'


শনিবার (২৩ আগস্ট) এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে ''সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন ও নারীর ক্ষমতায়ন'' নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন তিনি। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, 'দুঃখজনক হলো, আন্তর্জাতিক এই নীতি কমিশনে অনুপস্থিত। গত ৩ আগস্ট ৬৭টি নারী সংগঠন ঐকমত্য কমিশনে নারীর ক্ষমতায়ন ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক দলগুলোও আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। এমতাবস্থায় মনে হচ্ছে ঐকমত্য কমিশন ঘেরাও ছাড়া কোনো উপায় নেই।' 


তিনি বলেন, 'নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ নারীর মনোনয়ন প্রস্তাব এখনও উপেক্ষিত। দলগুলো ৫ থেকে ৭ শতাংশ নারীকে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে চায়, এটা দয়া দাক্ষিণ্যের মতো। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে এখনো আস্থার সংকট রয়েছে। নারীকে কেবল রাষ্ট্রের কাছে অধিকার চাইলেই হবে না। পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই নারীর ক্ষমতায়নের দাবি উত্থাপন করতে হবে।'

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, 'সংরক্ষিত নারী আসনে বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা প্রকৃত পক্ষে দলীয় মনোনয়ন বা সিলেকশন। যেখানে জনগণের ভোট নয় দলীয় নেতৃত্বের কৃপায় এমপি হতে হয়। এতে ভোটাররা নারী প্রার্থীদের প্রকৃত জনপ্রিয়তা, দক্ষতা, যোগ্যতা যাচাই করতে পারে না। তাই সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন না হওয়ায় গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থার পূর্ণতা পায় না।' 

তিনি বলেন, 'সংসদে সংরক্ষিত নারী এমপিদের বলা হতো অলংকার, যা কখনো নারীর জন্য সম্মানজনক হতে পারে না। সংসদে অলংকারের সেট বসিয়ে রেখে নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। দুই একজন ব্যতীত বেশিরভাগ সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিরা হ্যাঁ না ভোট এবং হাতে তালি দেওয়া ছাড়া তেমন কোনো কাজ করেনি। এমনকি অনেক নারী এমপিকে সংসদে স্ক্রিপ্ট দেখে বক্তব্য দিতে গিয়েও হাত, পা, মুখ, গলা কাপতে দেখা গেছে। সংসদে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব নারী এমপিদের অবস্থা দেখে মনে হতো ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি। এদের কার কি যোগ্যতা, সংবিধান, আইন কানুন জানে কি না কোনো কিছুরই বালাই ছিল না। যা সংরক্ষিত নারী আসনের পদগুলোকে সম্মানিত করতে পারেনি। সংসদটাকে সার্কাসে পরিণত করেছিল এই ধরণের এমপিরা।'

কিরণ বলেন, 'জাতীয় সংসদে নারীর সরাসরি নির্বাচন ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তাতে নারী নেত্রীদের কেউ কেউ প্রয়োজনে ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয় ঘেরাও এর কথা ভাবছেন। কিন্তু কমিশন বলছে তারা সংসদে নারীর সরাসরি নির্বাচন ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধির সব রকম চেষ্টাই করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়নি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কোন নারী সদস্য নেই। সংলাপে ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও প্রধান দলগুলোর পক্ষ থেকে কোন নারী প্রতিনিধি সংলাপে অংশগ্রহণ করার দৃশ্য চোখে পড়েনি। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ব্যতীত জাতীয় সংসদে নারীর আসন বৃদ্ধি, সরাসরি নির্বাচন ও নারীর ক্ষমতায়ন সুরক্ষিত করা অসম্ভব। কিন্তু নারী সংগঠনগুলো এ বিষয়ে দৃশ্যত দলগুলোর ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করছে বলে দেখা যাচ্ছে না। তাই নারী নেত্রীদের সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ প্রধান দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করা উচিত।' 

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন হলেই নারীর ক্ষমতায়ন সুরক্ষিত হবে” শীর্ষক ছায়া সংসদে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর বিতার্কিকদের পরাজিত করে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। 

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন, অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সিনিয়ার সাংবাদিক মাঈনুল আলম, মাইদুর রহমান রুবেল, নিশাত সুলতানা, সাংবাদিক জান্নাতুল বাকেয়া কেকা। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।


জাতীয় এর আরও খবর: