কল্যাণ রাষ্ট্র গঠণে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ জরুরি : সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

গতকাল সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়করণ হতে বঞ্চিত, অবহেলিত, ক্ষুধার্ত, লাঞ্ছিত এবং মানবেতর জীবন যাপনকারী সারাদেশ থেকে আগত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকগণের দাবির প্রতি সংহতি ও পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, এত সংগ্রাম এত বিপ্লব এত বিদ্রোহের পর আমরা স্বাধীন, তবুও আমরা স্বয়ং সম্পূর্ণ নই। আজও মানুষ কাঁদছে, আজও মানুষ না খেয়ে মরছে, শিক্ষণগন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে, আজও আমরা পরমুখাপেক্ষী। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কল্যাণ রাষ্ট্র গঠণে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ জরুরি।
তিনি দাবি করেন, প্রাথমিক স্তরে কোমলমতি শিশুদেরকে নৈতিক, মানবিক, সুশৃঙ্খল, সুশিক্ষা প্রদানে প্রাথমিক শিক্ষকগণের ভূমিকা অপরিসীম।
১৯৭৩ সালের তৎকালীন সরকার ৩২,০০০(বত্রিশ হাজার) এবং পরবর্তীতে আরো ৪১৬৫ টি (চার হাজার একশত পয়ষট্টি) সহ সর্বমোট ৩৬১৬৫ টি (ছত্রিশ হাজার একশত পয়ষট্টি) বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কর্মরত শিক্ষিকগনকে জাতীয়করণ করেছিলেন।
দীর্ঘদিন এই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে এবং ১৯৯৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রেজিস্টার প্রথা চালু করেন এবং শিক্ষকগণদের বেতন ভাতা প্রদান করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে ৯ই জানুয়ারি আরো ২৬১৯৩ টি (ছাব্বিশ হাজার একশত তিরানব্বই) বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে। এই প্রক্রিয়ায় আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম এবং সঙ্গত কারণে ভেবেছিলাম যে, আমাদের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো দ্রুত জাতীয়করণ হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাই-বাছাইকৃত ২০১৩ সাল হইতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি বিধিমালা অনুসরন পূর্বক উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিস থেকে চুড়ান্ত যাচাই বাছাই শেষে জাতীয়করণের লক্ষ্যে (৩৫৩৬+৬২৩) মোট ৪১৫৯ টি (চার হাজার একশত ঊনষাট) প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হলেও অদ্যাবধি পর্যন্ত জাতীয়করণ করা হয়নি। এবং শতভাগ নিয়মাবলি অনুসরণ পূর্বক পরিচালিত ১৭৯২ টি (এক হাজার সাত শত বিরানব্বই) বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হয়রানির উদ্দেশ্যে উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস চুড়ান্ত যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া আটকে রাখেন। (৪১৫৯+১৭৯২) টি সহ সর্বমোট ৫৯৫১টি (পাঁচ হাজার নয়শত একান্ন) বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ৩৫৭০৬ (পয়ত্রিশ হাজার সাতশত ছয়জন) জন শিক্ষকগণ দেড় যুগ অতিবাহিত হলেও দৃশ্যমান ও যৌক্তিক কোন প্রতিকার পায় নি বরং সকল প্রতিকূলতায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ কর্মরত থেকে পাঠদান চালিয়ে আসছেন। প্রায় ৭,৫০,০০০( সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) জন ছাত্র-ছাত্রী সরকারি অনুদান ও উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এবং দেশের অপুরনীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে, যাহা কোনোমতেই কাম্য নয়। উক্ত ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন যৌক্তিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করে আসছে। এই দেশটি স্বাধীন হয়েছিলো সাম্য মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের অঙ্গীকার নিয়ে কিন্তু বার বার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী করে দুর্নীতি, ক্ষমতার মোহ, স্বার্থপরতা, স্বজনপ্রীতি, আত্বীয়প্রীতিতে দেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
রক্তে রঞ্জিত বাংলাদেশে মজলুমের আর্তনাদ অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে দায়িত্বশীলদের নৈতিক ও মানবিক আচরণ জাতির একান্ত প্রত্যাশা।
জাতির প্রশ্ন প্রাথমিক শিক্ষকগণ কেনো ন্যায্য অধিকারের জন্য বার বার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে?
এমনকি গত ২৮ এ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কনসাল্টেশন কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশমালায় অনধিক ৫০০০ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।