রাশিয়া-বেলারুশের সামরিক মহড়ায় যোগ দিল বাংলাদেশ-ভারতসহ ৬ দেশ

 প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:২১ অপরাহ্ন   |   জাতীয়

রাশিয়া-বেলারুশের সামরিক মহড়ায় যোগ দিল বাংলাদেশ-ভারতসহ ৬ দেশ


রাশিয়া ও বেলারুশের যৌথ সামরিক মহড়া 'জাপাদ-২০২৫'-এ বাংলাদেশ, ভারতসহ আরও ছয়টি দেশ অংশ নিয়েছে। পাঁচ দিনব্যাপী এই মহড়া মস্কো এবং দিল্লির মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করে। এই অংশগ্রহণ এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ শুল্ক আরোপের কারণে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক টানাপোড়েন চলছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, ভারতীয় সেনারা এই মহড়ায় অংশ নিয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, পাঁচ দিনের এই সামরিক মহড়ায় অংশ নেওয়ার জন্য ৬৫ জন সেনা সদস্যকে পাঠানো হয়েছে। 


এই মহড়া ছিল রাশিয়া ও বেলারুশের একটি শক্তি প্রদর্শন, যার মাধ্যমে তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং কোনো আক্রমণ ঘটলে তাদের যৌথ প্রতিরক্ষা কৌশল প্রদর্শিত হয়েছে। মহড়ায় এক লাখ সৈন্যের উপস্থিতি ছিল এবং এতে পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন বোমারু বিমান ও যুদ্ধজাহাজও প্রদর্শিত হয়। এই মহড়া এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন পোল্যান্ডে রাশিয়ান ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার কারণে ন্যাটো দেশগুলোর সঙ্গে তাদের তীব্র উত্তেজনা চলছে।


এই মহড়ায় শুধুমাত্র ভারতই একমাত্র বিদেশি রাষ্ট্র ছিল না। তাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান, বাংলাদেশ, বুরকিনা ফাসো, কঙ্গো প্রজাতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্র (ডিআরসি) এবং মালিও এতে অংশ নিয়েছে। ভারতের এই অংশগ্রহণ কুমাউন রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়ন দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি করা। তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন যে, ভারতের এই অংশগ্রহণ চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হারানোর সংকেত হতে পারে।



গত মাসে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় আমদানির ওপর ৫০% শুল্ক আরোপ করে অভিযোগ করেছিল যে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণকে সহায়তা করছে। তবে, গত সপ্তাহে ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের এই পোস্টের জবাবে বলেছিলেন, 'ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং প্রাকৃতিক অংশীদার।' তিনি আরও জানান, তিনি নিশ্চিত যে তাদের বাণিজ্য আলোচনা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের সীমাহীন সম্ভাবনা উন্মুক্ত করবে।


এটি প্রথমবার নয় যে ভারত রাশিয়ার সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। ২০২১ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ আক্রমণ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে ভারত রাশিয়ার ভলগোগ্রাদ অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী ও পরম্পরাগত সামরিক অপারেশন সম্পর্কিত মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। ইরানও ২০২৫ সালের জাপাদ মহড়ায় অংশ নিয়েছে, যদিও ইরানের সৈন্যদের উপস্থিতি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। 


তবুও, ইরান এবং রাশিয়ার সম্পর্ক গভীর হয়েছে এবং তারা একে অপরকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। যেমন, রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইরান শাহীড ড্রোন সরবরাহ করেছে এবং পশ্চিমা গোয়েন্দাদের মতে, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও সরবরাহ করেছে। এই দুটি দেশ সম্প্রতি একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে। ইরান ও রাশিয়া পূর্বের রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও সমন্বিত সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে, যেমন ক্যাস্পিয়ান সাগরে সামরিক অনুশীলন।


এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এই মহড়ায় পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিল এবং তারা এই মহড়ার সময় রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে, বিশেষ করে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ শেষ করার জন্য।


সূত্র: আল জাজিরা


জাতীয় এর আরও খবর: