জীবননগরে চাঞ্চল্যকর ভ্যানচালক ফজলু হত্যাকান্ড : কিস্তির টাকার জন্য মামাতো ভাইকে হত্যা

 প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১২:০৩ অপরাহ্ন   |   আইন-আদালত-অপরাধ

জীবননগরে চাঞ্চল্যকর ভ্যানচালক ফজলু হত্যাকান্ড :  কিস্তির টাকার জন্য মামাতো ভাইকে হত্যা



রকিবুজ্জামান / পিয়াস হোসেন (চুয়াডাঙ্গা):  


গত ২০ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ভ্যান নিয়ে বের হয় নিহত ফজলু ও তার ফুফাতো ভাই জব্বার।  সারারাত ফজলু নিখোঁজের পরের দিন ২১ ফেব্রুয়ারী সকাল ৯ টায় মনোহরপুর গ্রামের ভৈরব নদীর পাড়ে জনৈক মোশারফ গাইনের পানের বরজ সংলগ্ন কাঁচা রাস্তার পাশে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। ফজলুর মুখ দিয়ে ফেনা জাতীয় পদার্থ বের হতে দেখে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন স্থানীয় লোকের সহযোগিতায় জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন।



এ ঘটনায় পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে  নিহতের আপন  ফুফাতো ভাই সন্তোষপুর গ্রামের দলিল উদ্দীনের ছেলে  জব্বার মিয়া(২৯)কে আটক করে এবং এ হত্যাকান্ডের মূলরহস্য উদঘাটন করেন।



পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আসামী মোঃ জব্বার মিয়া ঘটনার বিষয়ে লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়, ভিকটিম ও আসামী পরস্পর আপন মামাতো-ফুফাতো ভাই।



আসামী বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে  ঋণের দায়ে চরম বিপদগ্রস্থ অবস্থায় ছিলো। তাই চলতি মাসের ঋনের কিস্তির টাকা  পরিশোধের কোন উপায় না থাকায় ঋনের কিস্তির সর্বমোট ৬ হাজার পাঁচশত টাকা পরিশোধের জন্য সে ভিকটিম মজনুকে হত্যা করে তার ভ্যান এবং মোবাইল নেওয়ার পরিকল্পনা করে।


পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার তিনদিন পূর্বে দুপুরের দিকে আসামী জীবননগরে কৃষিসেবা ও পরামর্শ কেন্দ্র থেকে বন বিড়াল মারার কথা বলে ১০ টাকার দানাদার কীটনাশক ক্রয় করে। ঘটনার দিন গত ২০ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা অনুমানিক ৭ টার সময় ভিকটিম ( ফজলুকে ও ঘাতক আসামী জব্বার মিয়া ভ্যান নিয়ে বাড়ী হতে বের হয়।



কিছুদুর যেয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী জব্বার ভিকটিম মজনুকে বলে যে, আজ কিন্তু গয়েশপুর মাল মারতে হবে। ভ্যানযোগে গয়েশপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে রাত অনুমান সাড়ে ৮ টার দিকে ধোপাখালী বাজারে পৌঁছে আসামী একটি দোকান হইতে একটি স্পিড ও একটি যৌন উত্তেজক স্নেহা বোতল ক্রয় করে।


এবং সেই দোকানের সামনে দাড়িয়ে আসামী জব্বার অর্ধেক স্পিড খায় ও বাকী স্পিডের মধ্যে কৌশলে কীটনাশক দানাদার মিশিয়ে রাখে। এসময়  ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছে আসামী জব্বার ভিকটিম মজনুকে স্পিডের বোতল দিয়ে বলে আমি খেয়েছি, বাকিটুকু তুই খা। ভিকটিম স্পিড খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে নিস্তেজ হয়ে ভ্যানের উপর শুয়ে পড়ে।


আসামী জব্বার ভ্যান চালিয়ে রাত অনুমান ৯ টায় ভৈরব নদীর ধারে পান বরজের কোনায় নিয়ে যায় এবং ভিকটিম মজনুকে মাটিতে শুয়াইয়ে দিয়ে ভিকটিমের কোমর হতে মোবাইল ও ভিকটিমের ভ্যান চালিয়ে জীবননগর হয়ে সোজা কোটচাঁদপুর চলে যায়।



গত ২১ ফেব্রুয়ারী (বুধবার)  ঝিনাইদাহ ডাকবাংলা বাজারে একটি মোবাইলের দোকানে গিয়ে নিহত ফজলুর ব্যবহৃত মোবাইল ৫ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করে এবং ভিকটিমের ভ্যান বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয়ের চেস্টা করে ব্যার্থ হয়।


জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত আসামী জব্বার এঘটনার দায় স্বীকার করে চুয়াডাঙ্গা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে।



এ ঘটনায় পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর হতে নিহত ফজলুর মোবাইল ও ভ্যান উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় আটককৃত আসামী জব্বারের বিরুদ্ধে  হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।  জীবননগর থানার মামলা নং-২১, তারিখঃ ২৫.০২.২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩২৮/২০১ পেনাল কোড দায়ের করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

আইন-আদালত-অপরাধ এর আরও খবর: